মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমীপে সবিনয় নিবেদন—–

আতিক আজিজ : ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলোর প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক কর্মচারীদেরকে বিশেষ প্রণোদনা ও রেশনিং কার্ড প্রদান প্রসঙ্গে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
সর্ব প্রথমে সংগ্রামী সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,আমরা জানি শিক্ষাই আলো, নিরক্ষতা অন্ধকার। শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে ,জাতিকে কওে উন্নত, স্বাধীন ও মর্যাদাশীল।জাতীয় জীবনের এই তাৎপর্য বেিবচনা কওে তাকে জাতির মেরুদÐ আখ্যায়িত করা হয়েছে। সৃতরাং ব্যক্তি সমাজ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতির জন্য শিক্ষা অপরিহার্য।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি অবশ্যই জানেন,
বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে প্রায় ৬ লাখ। লেখাপড়া করছে প্রায় ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, গত ১৫ এপ্রিল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে আপনি বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এই বিশেষ প্রণোদনা খাতে এবার ব্যয় করা হবে। সেটা সর্বস্থরের মানুষ পাবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ চাহিদা বেসরকারি স্কুলগুলো পূরণ করে থাকে। অথচ সরকারি কোনো প্রকার সাহায্যা ছাড়াই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মাসিক ফি দিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে।
অপরদিকে স্কুলগুলোর প্রায় ৯৯ শতাংশ ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত।মাসিক সম্পূর্ণ আয়ের ৩০ শতাংশ ঘর ভাড়া, ৫০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা, বাকি ২০ শতাংশ বা তারও বেশি গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি ঘোষণা মোতাবেক বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের বেতন আদায়। চরম বাস্তবতায় বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিচালিত দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছেন।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাদেশে সকল কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিশেষ প্রনোদনা ঘোষণা সময়ের দাবি।
সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যেগে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। চলমান অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে আর্থিক টানাপোড়নে দিশেহারা হয়ে যাবেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অথচ শিক্ষার সম্প্রসারণে ব্যক্তিমালিকানাধীন স্কুলগুলো যদি না থাকতো তাহলে সরকারকে আরো ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করে প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারী বেতন বাবদ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হতো।

কিন্তু মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে সমাজে পরিচিত শিক্ষকগণ সম্মানের কথা চিন্তা করে ত্রাণের জন্য লাইনেও দাঁড়াতে কিন্তু মানুষ পারছেন না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছেন প্রণোদনা। সেখানে সমাজের প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত হলেও শিক্ষাখাত এখনো বাইরে রয়ে গেছে। ফলে চরম বাস্তবতায় রীতিমত এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
চলমান করোনাভাইরনাসের প্রাদুর্ভাবে যদি সেপ্টম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সংকট চরম আকার ধারণ করবে।
শিক্ষাই শক্তি,শিক্ষাই প্রগতি এবং শিক্ষাই উন্নতির চাবিকাঠি। সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি জাতির অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য শিক্ষা বা জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা বৈষয়িক তথা অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান। তাই জাতীয় উন্নতির পূর্বশর্ত হিসেবে শিক্ষাবিস্তাওে আমাদের আরো বেশী যতœশীল ও সচেষ্ট হতে হলে ঈদ উল ফিতরের আগেই ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি স্কুলগুলোর প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক কর্মচারীদের নামে রেশনিং কার্ড প্রদান এবং তাঁদের জন্য বিশেষ প্রনোদনা ঘোষণা করা সময়ের দাবি রাখে। তাই আসন্ন ঈদুল ফিতর উদ্যাপন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার স্বার্থে আপনার ঘোষিত প্রণোদনা থেকে টাকা বরাদ্দ প্রদানসহ তাঁদের প্রত্যেকের নামে রেশনিং কার্ড দেয়ার জন্য সবিনয়ে নিবেদন করছি ।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, ১৩ এপ্রিল সোমবার রাতে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া আপনার দেয়া মহামূল্যবান ভাষণের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে এবং আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু তথা আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মঙ্গল, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করছি।

‘করোনাভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই: মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।’
জয় হোক মানবতার, জয় হোক মানুষের, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। ###

(লেখক : মানবাধিকারকর্মী, কবি, সাংবাদিক )

আতিক আজিজ
সম্পাদক: কাঁচামাটি
চেয়ারম্যান: জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি (গভ:রেজি:নং-এস-৮৯১৩)
সহসভাপতি : বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সমন্বয়ক : কবিসংসদ বাংলাদেশ (আহবায়ক কমিটি)
সহসভাপতি : স্মৃতি’৭১
মোবাইল: ০১৭১২ ৩৮৪২৬৫

Posted on May 6, 2020, in জাতীয়, বিশেষ সংবাদ, মানবাধিকার. Bookmark the permalink. Leave a comment.

Leave a comment